
রবিবার ২৫ মে ২০২৫
-“সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রশংসাই আমার কাছে অস্কার ছিল”
-“দর্শকের আগ্রহ না থাকলে ছবিরও কোনও মূল্য নেই”
-“ দর্শক যত উদার হবেন, তত আমাদের বিভিন্ন ধরনের গল্প বলার সাহস বাড়বে”
বক্তার নাম সুজয় ঘোষ। পরিচালক সুজয় ঘোষ । ‘কহানি’, ‘বদলা’, ‘জানে জাঁ’র মতো একাধিক বক্স অফিস সফল হিন্দি ছবির নির্দেশক। সেই তিনি-ই আবার উদাত্ত গলায় জানাতে পারেন, কলকাতা আমার প্রাণের শহর, জন্মেছি এখানে । ঠিক যেমন ‘বাপি বাড়ি যা’ স্টাইলে ফ্রন্টফুটে জবাব দিতে পারেন কেন শাহরুখের ‘কিং’ ছবি থেকে সরে এলেন! শুনলেন রাহুল মজুমদার।
আপনার অধিকাংশ ছবিতে থ্রিলার আর সাসপেন্সের একটা গা ছমছমে অনুভূতি থাকে - এই গল্প বলার ধরন কীভাবে গড়ে তোলেন?
সুজয়: পাঠক পাতা না ওল্টালে বইয়ের কোনও মূল্য নেই, ঠিক তেমন দর্শকের আগ্রহ না থাকলে ছবিরও কোনও মূল্য নেই। পাতা ওল্টানোটা খুব দরকার। ছোটবেলায় ‘অরণ্যদেব’, ‘ম্যানড্রেক’, ‘রিপ কার্বি’র খুব ভক্ত ছিলাম। সংবাদপত্রের নীচে প্রতিদিন তিনটে ছোট ছোট প্যানেল ছাপা হত। ওইটুকু পড়ে আগ্রহ আরও বাড়ত। এই যে যেভাবে আটকে রাখতে পারত, ওই...ওই ব্যাপারটা হয়তো আমার মধ্যে রয়ে গিয়েছে। চেষ্টা করি আমার ছবির দর্শকের মধ্যে সেই আগ্রহের মাত্রাটা রাখতে। অবশ্য যতদিন যাচ্ছে, এই ব্যাপারটা আরও কঠিন হয়ে যাচ্ছে। কারণ দর্শকের মনযোগ কমছে। আগেকার সময়ে মনঃসংযোগের ব্যাঘাত ঘটানোর জিনিসপত্র খুব কম ছিল। আর এখন? হাতের মুঠোয় এখন টোকা মারলেই গোটা পৃথিবী হাজির! তাই আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয় যে কোনও ছবির গল্প বলার মধ্যে একটা থ্রিলিং উপাদান থাকা দরকার, যাতে দর্শকের মনযোগ ধরে রাখা যায়। নইলে দর্শকের কেন দায় পড়েছে আমার ছবি বসে দেখার?
দর্শকদের কি খামতি নয় যে তাঁদের মনযোগ দেওয়ার ক্ষমতা কমে যাচ্ছে?
সুজয়: হ্যাঁ, সেটাও ঠিক। এই ফাঁকে আর একটা কথা বলি, সত্যজিৎ রায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, প্রফুল্ল রায়- এঁদের লেখা পড়ে পড়েই কিন্তু আমি গল্প বলা শিখেছি।
‘কহানি’, ‘বদলা’, ‘জানে জাঁ’-র মতো আপনার অধিকাংশ ছবিরই মুখ্যচরিত্রে মহিলা। এটা কি সচেতনভাবে করেন না কি গল্পের প্রয়োজনে?
সুজয়: দ্যাখো, এটা কিন্তু ইচ্ছাকৃত নয়। গল্পের প্রয়োজনেই হয়। তবে ‘কহানি’-র ব্যাপারটা আলাদা। ওটা খানিক ইচ্ছাকৃত। আসলে, বিদ্যা আর আমার পরস্পরের সঙ্গে ভীষণ কাজ করার ইচ্ছে ছিল বহুদিনের। খুব খেটেছিলাম, বহু মাথা ঘামিয়ে এই ছবি তৈরি করেছিলাম। আর বদলা র গল্প প্রয়োজনে। ‘জানে জাঁ’ একটা জাপানি নভেলের অনুসরণে বানানো। সেখানে মুখ্যচরিত্র একজন মহিলা-ই ছিলেন। তাই সেখানে ইচ্ছাকৃত করার কোনও প্রশ্নই নেই। আর অহল্যা...অহল্যা...না সেক্ষেত্রে এই কথাটা খাটে না, কারণ অহল্যার গল্পটা আমি লিখেছিলাম স্রেফ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজ করব বলে। আর একটা কথা বলব?
নিশ্চয়ই!
সুজয়: ‘অহল্যা’তে অভিনয় করে ভীষণ খুশি হয়েছিলেন সৌমিত্রবাবু। ওই যে ওঁর আনন্দটা... আমাকে বলেওছিলেন। আমার জন্য ওটাই অস্কার! (হাসি) রাধিকা আপ্তে ফোন করে আমাকে জানিয়েছিল প্রশংসা বার্তা ঢুকেই যাচ্ছে তাঁর ফোনে। আসলে ছোট ছবি তো ভালবাসার ফসল। ছোটছবির প্রচার তো আর হয় না। একমাত্র দর্শকের মুখ-ই ছিল অহল্যা র প্রধান প্রচারের অস্ত্র।
আপনার ছবিতে বারবার দেখা যায় কে ভাল, কে খারাপ সেটা খুব পরিষ্কার নয়। ধূসর চরিত্রের মানুষদের গল্প বলতেই কি বেশি পছন্দ করেন?
সুজয়: তা তো বটেই। আসলে, এই বিষয়টা না স্টোরিটেলারের থেকে বেশি নির্ভর করে দর্শকের গ্রহণযোগ্যতা, দৃষ্টিভঙ্গির উপর। আগে বেশিরভাগ সময় কী হত, সবকিছু ভীষণ সাদা-কালো ছিল। ধূসর বিষয়টি প্রায় ছিল-ই না। নায়ক মানে নায়ক-ই, খলচরিত্র মানে খলচরিত্ররাই। আগে আমরা জানতাম যাকে ভাল মানুষ, ধরে নিতাম সে ভাল মানুষ-ই হয়। সময় যত কেটেছে, বই-ভ্রমণ- সমাজমাধ্যমের মাধ্যমে আমরা জেনেছি বিষয়ে এতটাই সরল নয়। মানুষ জেনেছে, তাই তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টেছে। এই সময়ের দর্শক কিন্তু তাই বেশ খোলা মনের।
আমার ‘জানে জাঁ’ ছবির কথাই ধরি। মানুষ কিন্তু জানে জয়দীপ আহলেওয়াত-এর চরিত্রটি একজন অঙ্ক শিক্ষকের অথচ প্রেমের জন্য সেই শিক্ষক-ই কী না করতে পারে! ছাত্র পড়াচ্ছে অথচ তাঁর মধ্যেই একটা নির্দয় মানুষ ঘাপটি মেরে লুকিয়ে রয়েছে। এটা কিন্তু দর্শক মেনে নিচ্ছে। অবাক হচ্ছে না। আর দর্শক যত উদার হবেন তত আমাদের বিভিন্ন ধরনের গল্প বলার সাহস বাড়বে।
আপনার থ্রিলারে নতুন রকমের টোনের আমদানি করেছেন। মানে, বলতে চাইছি আপনার থ্রিলারের চরিত্রগুলি যথেষ্ট আবেগপ্রবণ, দুর্বলতা রয়েছে...এইটে কীভাবে ব্যালেন্স করেন?
সুজয়: ব্যালেন্স না। হিন্দি ছবির জন্য আবেগ খুব, খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর তার একটাই কারণ। আমাদের এত বড় দেশ, এত ভাষাভাষীর মানুষ, এত ভিন্ন চিন্তাধারা- সবকিছুকে একটা ব্যাপারই বেঁধে রাখতে পারে, তা হল আবেগ। তাই আমার ছবির চরিত্রদের মধ্যে যদি ভালবাসা, মায়া, রাগ, ঘৃণা না থাকে তাহলে দেশের দর্শক তাদের সঙ্গে একাত্ম বোধ করবে কী করে? তাই আমি চেষ্টা করি, আমার চরিত্রদের মধ্যে যে আবেগগুলো রয়েছে তা যেন দর্শকের সামনে উন্মোচন হয়। দর্শককে দেখতে চাই, আমার চরিত্রের মধ্যে যদি রাগ তৈরি হয়, তা যেন প্রকাশ পায়, হিংসে-ভালবাসার ক্ষেত্রেও তাই। ‘কহানি’তে ‘রাণা’ যখন ‘বিদ্যা বাগচী’কে বলে যে, তুমি খুব ভাল মা হতে পারবে, শোনামাত্রই মুখটা ঘুরিয়ে নেয় বিদ্যা। কারণ ও জানে যে কোনওদিনও মা হতে পারবে না সে। এই যে চরিত্রের কষ্টটা এটা যদি দর্শককে না বলতে পারি, তাহলে আর কী গল্প বলা শিখলাম?(মৃদু হাসি)
আপনার ছবিতে কলকাতা খুব গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হয়ে ওঠে। এর পিছনে কি কোনও ব্যক্তিগত বিষয় আছে?
এটা আমার শহর!(জোর গলায়) ভালবাসার শহর। আমি জন্মেছি এখানে! অনেকের থেকে বেশি ভাল আমি কলকাতাকে চিনি। তাই কী হয়, যখন আমি কোনও গল্প বলি না তখন তার সঙ্গে কোন পরিবেশটা আমার গল্পটাকে আরও উন্নত করবে। তাই কলকাতা যেহেতু ভাল করে চিনি, তাই গল্পে কলকাতাকে প্রয়োজনমতো ব্যবহার করতে পারি।
আপনার চিত্রনাট্যে সংলাপের থেকেও নৈঃশব্দ্য বেশি গুরুত্ব পায়। এটা কি হিচকক, সত্যজিৎ-এর প্রভাব?
সুজয়: একটু খুলে বলি। ছবিতে সংলাপ যদি দ্রুত বলতে থাকে চরিত্ররা...মানে ফটাফট ফটাফট বলে গেল, তখন তা শুনে ও দেখে মনে হয় মুখস্থ বলছে (জোরে হাসি)। মানে তুমি আমাকে যদি প্রশ্ন করো, আগে তো আমাকে মন দিয়ে সেটা শুনে বুঝতে হবে। তারপর আমি জবাব দেব। ওইটাই। তাই নৈঃশব্দ্য থাকাটা প্রয়োজন। অনেক বেশি বাস্তব লাগে। আর বাস্তবের কাছাকাছি থাকলে তবেই না দর্শক একাত্ম হবেন।
শাহরুখের ‘কিং’ নিয়ে এত কথা হল। আপনার গল্প, আপনি পরিচালক। হঠাৎ শোনা গেল আপনি সেই প্রজেক্ট থেকে সরে গিয়েছেন! আসমুদ্রহিমাচলকে অবাক করে আপনার তরফে কোনও বিবৃতি এখনও আসেনি এই বিষয়ে। কেন?
সুজয়: (বেশ খানিকক্ষণ চুপ) আমি সত্যজিৎ রায় নই, কিশোরকুমার নই, রাহুল দেববর্মণ নই। আমার সঙ্গে তো সত্যজিৎ রায়ের কোনওদিন ব্যক্তিগত আলাপ হয়নি। কাজের মাধ্যমেই ওঁদের সঙ্গে আমার পরিচয়। ওঁদের কাজটাই আমার কাছে মন্দির, যেখানে আমি পুজো করি। সেই থেকেই বলি, আমার কাজ-ই আমার পরিচয় হোক। আমার নিজের কথা নয়। কোনওদিন নিজের কাজকম্মো নিয়ে ঢাকঢোল পিটিয়ে বলিনি, আজও পারি না। তাই এই বিষয়ে অন্য আরেকদিন বিশদে কথা হবে। এইটুকুই।
আপনার পরের ছবির নায়ক নাকি শাহিদ কাপুর? ‘কহানি ৩’ নিয়েও নাকি চিন্তাভাবনা শুরু করে দিয়েছেন?
সুজয়: আরে না! এই হচ্ছে মুশকিল। দুমদাম লোকজন কোথা থেকে কী রটায়। যখন হবে, যদি হওয়ার হবে, হবে। কত প্রতিবাদ করব? কত লোককে গিয়ে গিয়ে বলব বলো তো? কারণ আমারও তো নিজস্ব অনেক কাজ আছে। ‘কহানি ৩’ নিয়ে কাজ করার আমারও ভীষণ ইচ্ছে। তবে এই সিরিজের আগের গল্পগুলোর কথা মাথায় রেখে আমাকে নতুন ছবিটার জন্য সেরকম জবরদস্ত গল্প-ও তো বাছতে হবে। নাকি? তবে হ্যাঁ, যখন হওয়ার হবে। ক্রমশ প্রকাশ্য…
আপনার মেয়ে দিয়া অন্নপূর্ণা ‘বব বিশ্বাস’ পরিচালনা করেছিলেন। সে ছবিতে পরান বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কালীদা’ চরিত্রটি নিয়ে ভীষণ চর্চা হয়েছিল। চরিত্রটা নিয়ে ভবিষ্যতে কিছু করার ইচ্ছে রয়েছে?
সুজয়: খুব ভাল প্রশ্ন। আমি ‘কালীদা’-কে নিয়ে স্পিন-অফ করব! করবই। অন্নপূর্ণা কেন, কারও হাতেই কালীদা-কে ছাড়ব না! আমি নিজে করব। এখনই বলে দিচ্ছি!(জোর গলায়) ওরকম একটা চরিত্র...এত অদ্ভুত, ডার্ক চরিত্র, ছাড়া যায় নাকি! (হাসি)
অরিজিৎ সিং-এর কণ্ঠে নস্টালজিয়া ফেরাল 'মেট্রো ইন দিনো'র গানের ঝলক, শহরের ইতিকথায় প্রকাশ্যে এল 'ফার্স্ট লুক'
শুরুর আগেই বাধার মুখে তিন নতুন ধারাবাহিক! কী কারণে হঠাৎ শুটিং বন্ধ 'রাণী ভবানী', 'দাদামণি' ও 'কুসুম'-এর?
অরুণিমার প্রেমে পড়লেন অর্জুন! অর্ণ মুখোপাধ্যায়ের হাত ধরে ভালবাসার নতুন গল্প বুনবেন জুটিতে
‘পুবের জানালা’ খুলছেন অর্ণ মুখোপাধ্যায়, দেখবেন প্রিয়াঙ্কা-গৌরবের পাহাড়ি প্রেমের দৃশ্য, প্রকাশ্যে ফার্স্ট লুক
পর্দায় ফের 'কালী' রূপে আসছেন পায়েল দে! কোন ধারাবাহিকে নতুন রূপে দেখা যাবে অভিনেত্রীকে?
ফের এক ফ্রেমে মাধুরী-সঞ্জয় দত্ত! ‘খলনায়ক’-এর সিক্যুয়েল নিয়ে ফিরছেন সুভাষ ঘাই?
রাজনন্দিনীর সঙ্গে জুটিতে সায়ন, 'দুই শালিক'-এর পর 'রাজা রামকান্ত' হয়ে ছোটপর্দায় ফিরছেন নায়ক?
জামিন পাওয়ার পর গুরুতর অসুস্থতায় ভুগছেন নুসরত ফারিয়া! কী হয়েছে অভিনেত্রীর?
'দিদি নম্বর ওয়ান'-এর মঞ্চে 'অপারেশন সিঁদুর'-এর সেনার স্ত্রী! তুলে ধরলেন কোন হাড় হিম করা অভিজ্ঞতা?
প্রথম সপ্তাহেই ৯০-এর বেশি হল 'হাউসফুল'! বক্স অফিসে রেকর্ড গড়ল 'একেনবাবু'!
নিজেদের ছবি উধাও, পোস্টে কাঁটাছেঁড়া! রাজদীপ-তন্বী প্রেমভাঙার নেপথ্যে কি অন্য নারী?
কী বীভৎস! চোখ খুলে বেরিয়ে এসেছে আরিয়ানের, কী চলছে সিরিয়ালের অন্দরে?
প্রথমবার হিন্দি সিরিজে জন ভট্টাচার্য! বলি তারকাদের সঙ্গে কোন রহস্যে জড়াবেন অভিনেতা?
রাজকুমার রাও-কে নিয়ে ফের হাসির ছবি পরিচালনায় সুজিত সরকার! দ্বিতীয় নায়ক কে জানেন?
‘হেরা ফেরি ৩’-এ এবার ‘বাবু ভাইয়া’ পঙ্কজ ত্রিপাঠি? ‘কালীন ভাইয়া’র মন্তব্যে তোলপাড় নেটপাড়া!